ঘুঘু পাখির রোগ এবং চিকিৎসা পর্ব - ৫

পোস্ট Nov 18, 2020 | দেখা হয়েছে: 5651
ঘুঘু পাখির টাল বা ঘাড়বাঁকা রোগ:
ঘুঘু পাখির টাল বা ঘাড়বাঁকা রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমাদের দেশে শখের বসে কিংবা লাভের আশায় অনেকেই কবুতর পাশাপাশি ঘুঘু পালন করে থাকে। ঘুঘু পালন করতে গিয়ে অনেকেই আবার বিভিন্ন প্রকার বিরম্বনার শিকার হয়ে থাকেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঘুঘুর রোগ। ঘুঘুর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এসব রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ঘুঘুর টাল বা ঘাড়বাঁকা রোগ। আসুন জেনে নেই ঘুঘুর টাল বা ঘাড়বাঁকা রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় করণীয় সম্পর্কে-
ঘুঘু পাখির টাল বা ঘাড়বাঁকা রোগের কারনঃ
খাবার পানির পাত্রে পায়খানা করলে সেই পানি যথা সময়ে না সরিয়ে নিলে সেই পানি পান করলে এই রোগ ছড়াবে।
আক্রান্ত ঘুঘু পাখির সংস্পর্শে, এই রোগ ১০-১৫ দিন পর্যন্ত জীবানু ছড়াতে পারে।
নতুন ঘুঘু পাখির খামারে প্রবর্তনের মাধ্যমে হতে পারে।
রোগে আক্রান্ত ঘুঘু পাখি খামারে প্রবেশ করালে।
সংক্রমিত মলের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে।
বাইরের পাখি খামারে অবাধ প্রবেশ বা খামারের ঘুঘু পাখি বাইরের পাখির সংস্পর্শে আসলে।
ঘুঘু পাখির টাল বা ঘাড়বাঁকা রোগের লক্ষণঃ
1. বমি ভাব বা বমি করবে।
2. খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে খাঁচার এককোণে চুপ করে লোম ফুলিয়ে বা এক পা উচু করে অথবা গায়ে মুখ গুঁজে বসে থাকবে।
3. ঘাড় বেকে যাওয়া বা মুচড়ান বা ঘাড় উল্টে যাওয়া বা মাথা ঘুরান বা মাথা কাপতে থাকবে।
4. অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক পাখি কিছুটা শিথিল হয়ে যাবে ও দ্রুত ওজন কমে যাবে ও বুকের হাড্ডি বের হয়ে যাবে।
5. পায়ের সন্ধি/জয়েন্ট বা পায়ে ফুলে যেতে পারে।
6. উল্টে পড়ে যাবে বা খাবারের সঠিক জায়গায় ঠোকর দিতে পারবে না ।
7. বাকা ভাবে উড়া বা উড়তে গিয়ে পড়ে যাবে, একই জায়গায় ঘুরতে থাকবে।
8. গাড় সবুজ পায়খানা বা সবুজ ও সাদা পায়খানা বা পাতলা সবুজ বা পাতলা সবুজ ও সাদা পায়খানা ।
ঘুঘু পাখির টাল বা ঘাড়বাঁকা রোগ প্রতিরোধঃ
1.রোগের শুরুতেই আক্রান্ত ঘুঘু পাখি কে আলাদা করতে হবে।
2.দিনের বেশীর ভাগ সময় রোদে রাখতে হবে।
3.ঘুঘুর পানির পাত্রে পায়খানা করলে দ্রুত পানি বদলাতে হবে।
4.নিয়মিত বি কমপ্লেক্স প্রয়োগ করতে হবে। আর মনে রাখবেন বি কমপ্লেক্স শরীরে জমা থাকে না এটি ৩০%-৪০% শরীর শোষণ করে বাকিটুকু পায়খানার সাথে বের হয়ে যায়।
5.টাল ঘুঘু পাখির খাবার ছিটিয়ে দিলে খাবারে ঠোকর দিলেও খাবারে ঠোকর পড়বে না খাবারের সাইডে ঠোকর পড়বে তাই খাবার ১ জায়গায় বেশি করে দিতে হবে।
6.দিনে ২-৩ বার ঘার ফুটিয়ে দিতে হবে অর্থাৎ হালকা টেনে দিতে হবে টেনে দিতে হবে এতে পেশি ও স্নায়ু স্বাভাবিক হতে থাকবে।
7.নিয়মিত সালমনেলা কোর্স করাতে হবে সব থেকে ভাল হয় Hamico ph কোর্স করানো এবং ১ মিলি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতিমাসের শুরুতে ১-৫ দিন খাওয়াতে হবে।
8.পানি না খেতে পারলে সিরিঞ্জ দিয়ে তুলে খাওয়াতে হবে।
যেদিকে ঘাড় বাঁকা হয়েছে তার বিপরীত দিকে ঘুঘু পাখির মুখ ৫-৭ সেকেন্ড হাত দিয়ে ধরে রাখতে হবে দিনে ৩-৪ বার এই প্রক্রিয়া চালাতে হবে l
9.ভিটামিন বি খাওয়াতে হবে। মনে রাখবেন অসুস্থ ঘুঘু পাখি কে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ছাড়া অন্যান্য ভিটামিন দেওয়া উচিত নয়।
বিকল্প চিকিৎসা 2
আপনার শখের পাখির অসুখ হয়েছে আপনি যদি চিকিৎসা না দিয়ে মানুষের কথায় প্রথমেই পাখিটিকে হত্যা করেন তাহলে এটি অন্যায় হবে l আপনার চেষ্টা আপনি করবেন ভালো করা বা না করা সৃস্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিবেন l চিকিৎসার পর যদি ভালো না হয় তাহলে ভিন্ন কথা
টাল বা ঘাড় বাঁকা রোগের দুইটা চিকিৎসা আছে একটা প্রমাণিত এবং সময় সাপেক্ষ আরেকটা ঘরোয়া টোটকা
নিচে দেয়া হলো
ক) প্রথম পর্যায়ঃ
১. Nuro B (Human) injection 1/3cc (১সিসি এর ৩ ভাগের এক ভাগ)
করে টানা ১০ দিন দিতে হবে । সকালে খাবার দেয়ার আগে injection দিতে হবে। বুকের নরম অংশে injection দিবেন । সাবধান পা বা ঘাড়ে দিতে যাবেন না। অবশ্যই insulin or baby niddle ব্যবহার করবেন।
২. Injection দেবার পর হাতে ধরে খাওয়াবেন যদি নিজে থেকে খেতে না পারে ।
৩. দিনে ২/৩ঘন্টা রোদে দিবেন বা হেয়ার ড্রেয়ার ব্যবহার করবেন দিনে ২/৩বার।
৪. রোদে দিলে সাথে খাবার পানি দিবেন এবং এক কোণে একটু ছায়ার ব্যবস্থা করবেন যাতে প্রচন্ড রোদে ঘু ঘু একটু ছায়া পায় ।
৫. রাইস স্যালাইন হাতে ধরে খাইয়ে দিবেন। ৩০সিসি খাওয়াবেন বয়স অনুযায়ী কম বেশি হতে পারে। একবারে না খাইয়ে বাব বার খাওয়াবেন। এতে ঘুঘুর শরীরে শক্তি পাবে।
৬. ঘাড়ে হালকা ম্যাসেজ করতে পারেন।
৭. ঘুঘুটিকে আলাদা রাখতে হবে।
খ) দ্বিতীয় পর্যায়ঃ
১০ দিন ইঞ্জেকশন দেবার পর ভালো না হলে আরো ৫দিন একই নিয়মে ইঞ্জেকশন দিবেন। কোন মতেই কিন্তৃ ১৫দিনের বেশি ইঞ্জেকশন দিবেন না।
গ) তৃতীয় পর্যায়ঃ
মোট ১৫দিন ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরও যদি ভালো না হয় তাহলে ১৬তম দিন হতে vitamin b complex + codliver tab. ১টা করে ৫দিন।
ঘরোয়া চিকিৎসা :- এটা প্রমাণিত চিকিৎসা না তবে পাকিস্তান ও কাশ্মীরের কিছু জায়গায় এই চিকিৎসা অনেক বেশি হয় ۔ গোল মরিচ তিন টা ,এবং সরিষার বীজ 5 গ্রাম
প্রথমে গোল মরিচ ভালো ভাবে পিষে গুঁড়ো করে নিন এই বার পাখিকে খাইয়ে দিন তারপর সরিষার বীজ খাইয়ে দিন ۔ এবং পাখিকে রোদে ছেড়ে দিন ۔এই ভাবে দিনে দুই বার ১০ দিন l
(এটি আমার ব্যক্তি গত ভাবে টেস্ট করা নয় তাই কেউ এই পদ্ধতি বেবহার করবেন সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে)
সতর্কতা :- মনে রাখবেন একি রোগের ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসা হয় l তাই এক জায়গায় এক রকম চিকিৎসা পরামর্শ দেখে বিভ্রান্ত হবেন না প্রয়োজনে আপনারা নিকটস্থ ভেটেনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কাজ করুন l
0 comments

0 comments on ঘুঘু পাখির রোগ এবং চিকিৎসা পর্ব - ৫

Please sign in so you can post a comment.

EBIZNAS.COM

User since: Aug 31, 2017
See all ads »

+8********Show phone
+8********Show WhatsApp

অনুরূপ বিজ্ঞাপন

Go to top
This site uses cookies. By continuing to browse the site, you are agreeing to our use of cookies. Read more about our cookie terms.
রিমোভ