ঘুঘু পাখির রোগ ও চিকিৎসা পর্ব - ৬

ঘুঘুর কৃমি বা কীট রোগ ঘুঘুর অবস্থার উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ঘুঘু পারামক্সি,সাল্মনিল্লা এর পর সবচে মারাত্মক যে রোগ সেটা হল Internal & External Parasites । আমরা এখানে Internal Parasites বা ক্রিমির ব্যাপারে আলোচনা করব। ক্রিমির কারনে ঘুঘুর ওজন হ্রাস, খারাপ moult, ডায়রিয়া, এবং ক্লান্তি ছাড়ও আরো উপসর্গ থাকতে পারে। এটি ঋণাত্মক উর্বরতা প্রভাবিত করতে পারে। Hairworms roundworms আর ঘূঘুর জন্য ক্ষতিকর। এটা সবসময় ঘু ঘু পাখির আচরণ একটি কৃমি রোগের ক্ষেত্রে বাঞ্ছনীয়। যদি সময় মত এর চিকিৎসা না করা হয় তাহলে ঘু ঘুর মৃত্যু অনিবার্য।

1.ঘু ঘুর পাখা ঝুলে যাওয়া।

2.খাবারে অরুচিও পানি বেশি খাওয়া।

3.বিষ্ঠার সাথে ক্রিমির টুকরা বের হাওয়া।

4.ডাইরিয়া মত পানি পায়খানা করা।

5.ঘুঘুর ওজন হ্রাস।

6.ডিম ঋণাত্মক উর্বরতা।

7.ফিতা ক্রিমির জন্য শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

অপরিষ্কার খাবার,পানি, বা অন্য ঘুঘু থেকে, বা আক্রান্ত পুরাতন বিষ্ঠা থেকে হয়।ঘুঘুর কীট বা কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য নিচের কাজগুলো করতে হবে :

1.ঘুঘুকে কে ছেড়ে রাখা যাবে না।

2.আক্রান্ত কে আলাদা ভাবে চিকিৎসা করা।

3.নিয়মিত খাচা বা খামার পরিস্কার করা।

4.গরমে ২ মাস অন্তর কৃমি নাশক ঔষধ দেওয়া।

Wormazole / Asca piller / Panacure / Avinex / Acimec 1% মৌখিক সমাধান বা ইনজেকশন বা Ivermectin লোশন ইত্যাদি ঘুঘুর জন্য ভাল ঔষধ হিসাবে কাজ করে ।

১। ছোট ঘুঘুর জন্য 2/3 ড্রপ, বয়স্কদের PG, Wormazole-4/5 ড্রপ squab বা খুব ছোট ঘুঘুর বাচ্চা কে ক্রিমির ওষুধ প্রয়োগ করবেন না।

২। Asca Pilla: প্রতিটি ঘুঘুর জন্য 1 টা ট্যাবলেট।

৩। Panacure: প্রতিটি ঘু ঘুর জন্য 1/8 ট্যাবলেট।

৪। Avinex: পানি 1 লিটার সঙ্গে 1 GRM পাওডার।

৫। Acimec 1%: ফিড 2 তারপর 21 দিন পরে আবার 2 ড্রপ খাবার ও পরিশেষে তার কাঁধে 2 ড্রপ প্রদান পর প্রতিটি ঘুঘুকে ছাড়ুন। ইনজেকশন তার কাঁধে চামড়াই দিতে হবে , আপনি যখন ইনজেকশন দিবেন তখন সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। যাতে হাড়ের মধ্যে না লাগে।

৬। Ivermectin লোশন: ঘুঘুর মশা, মাছি ইত্যাদি দূর করতে পারবেন। এটি ঘুঘুর শরীর (ঘাড়) উপর এক ড্রপ দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে. Ivermec ঘুঘুর লাল মাইট, উকুন এবং সব ঘুঘুর মধ্যে আঁশযুক্ত লেগ মাইট সহ সব মাইট প্রতিকার হিসেবে কাজ করবে।

উপরেউল্লেখিত কৃমি ঔষধ গুলো প্রয়োগ করে গোটা কৃমি বের নাও হতে পারে, তার মানে এই না যে কৃমি ঔষধ কাজ করে নাই। এই কৃমি ঔষধ গুলো কৃমি কে গলিয়ে বের করে। আর আল্প মাত্রার কৃমি ঔষধ গোটা গোটা ভাবে বের করে। তাই অনেকে মনে করেন যে সেই সব কৃমি ঔষধই বোধহয় ভাল। আসলে তা ঠিক না। আর একটা কথা দামি কৃমি ঔষধই যে ভাল আর সস্তা ঔষধই যে খারাপ তাও ঠিক না। তাই এ ব্যাপারে আনুগ্রহ করে একটু খেয়াল রাখবেন সকলে। আবার অনেকে মনে করেন ফিতা কৃমি সাধারন ঔষধএ নির্মূল হয়ই না, এটাও সঠিক নয়। সাধারণত ফিতা কৃমির সংক্রমণ খুবই কম আর তা সাধারন ঔষধ দিয়ে নির্মূল করা সম্ভব।

১) অতি গরমে কৃমির ঔষধ দিবেন না, বা অসুখ আছে এমন ঘুঘুকে কৃমি ঔষধ দিবেন না, ছোট (sqab) বাচ্চা আছে এমন ঘুঘুকে কে কৃমি ঔষধ দিবেন না। এতে বাচ্চার হজম শক্তি কমে যাবে এমনকি মারাও যেতে পারে।

২) মানুষের কৃমির ঔষধ ব্যবহার করবেন না।

৩) কৃমির ঔষধ একটু ঠাণ্ডার সময় দিবেন, সেক্ষেত্রে সকালে বা রাতে প্রয়োগ করবে বা যেদিন বৃষ্টি বা আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকবে সেদিন দিবেন।

৪) গরমের ২ মাস অন্তর কৃমির ঔষধ দিবেন। আর শীতের সময় ৪৫ দিন পর পর।

৫) কৃমির ঔষধ দিবার পর স্যালাইন দিবেন পরদিন। তার পরদিন মাল্টিভিটামিন দিবেন।

৬) কৃমির ঔষধ দিবার পর ঘুঘুর খাওয়া কমে যেতে পারে বা হাল্কা একটু ঝিমুনি ভাব থাকতে পারে। নিয়মিত স্যালাইনে ও ভিটামিন দিলে ঠিক হয়ে যাবে।

৭) কৃমির ঔষধ দিবার আগে লিভার টনিক দিতে হবে, কারন শক্তিশালী কৃমি ঔষধ ঘুঘুর লিভার ও কিডনিতে আক্রান্ত করে বেশি।

৮) অধিক মাত্রা বা বেশি পরিমান ঔষধ দিবেন না।

৯) ভ্যাকসিন এর পর কৃমির ঔষধ দিবেন না।

আপনি যদি আপনার ঘুঘু থাকে ভাল উৎপাদন ফলাফল আশা করতে চান তাহলে অবশ্যই ঘুঘুর রোগ ও তার প্রতিকারের ব্যাপারে সঠিক ভাবে নজর দিবেন। ঘুঘু বেশি কেনার মধ্যে কোন বাহাদুরি নাই, কিন্তু ভালভাবে পালার মধ্যে আছে। আপনি যদি ঘুঘু পালতে না চান ভাল কথা, কিন্তু পালতে শুরু করে যদি সঠিক ভাবে খেয়াল না রাখেন তাহলে আপনি নিজের ও আল্লাহর কাছে দায়ী থেকে যাবেন। তাই আনুগ্রহ করে আপনার ঘুঘুর সঠিক যত্ন নিন।